বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন ড. ইউনূস ধান ক্ষেত থেকে অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার জমি নিয়ে বিরোধ; দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত দোকান বাকীর টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : বৃদ্ধ নিহত হবিগঞ্জে হত্যা মামলা, আ.লীগ সভাপতিসহ ২শ জন আসামি গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে শামীম ওসমান লুকিয়ে থাকার গুঞ্জন, তাল্লাশি শেষে যা বলছে পুলিশ নগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না এ সপ্তাহে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সারাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর গণভবনের মাছ-হাঁসও নিয়ে গেল জনতা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন, ছাড়লেন দেশ

ভাসানচর ঘুরে এসে রোহিঙ্গা নেতাদের ভিন্ন সুর

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি : “ভাসানচর খুব সুন্দর, সেখানে চাষাবাদ, মাছ চাষসহ জীবিকা নির্বাহের অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে। আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে।

কিন্তু সাগরের মাঝখানে হওয়ায় রোহিঙ্গারা যেতে চাইবে কিনা তা বলতে পারছি না। ”

এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন ভাসানচর ঘুরে আসা রোহিঙ্গা নেতা মো. জিয়া।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করতে চায় সরকার। সে কারণে অবকাঠামো নির্মাণসহ যাবতীয় আয়োজনও সম্পন্ন করা হয়েছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি ছিল তারা চরটি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে চান। সে অনুযায়ী তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। ভাসানচর পরিদর্শনের পর তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও ক্যাম্পে ফিরেই এভাবে ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচর বসবাসের উপযোগী কিনা, তা দেখে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে পৌঁছেন দুই নারীসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতা। তাদের মধ্যে কয়েকজন মসজিদের ইমামও ছিলেন।

ভাসানচরে অবস্থানকালে সেখানকার অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে প্রশংসা করেন রোহিঙ্গা নেতারা। কিন্তু ক্যাম্পে ফিরেই সুর বদলে গেছে তাদের। মো. জিয়ার মতো অনেকের ভাষ্য, ভাসানচর ভালো লেগেছে। দেখতে অনেক সুন্দর। কিন্তু সাগরের মাঝখানে দ্বীপে দীর্ঘদিন বসবাস করা যাবে কিনা বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।

ভাসানচর ঘুরে আসা রোহিঙ্গা নেত্রী জামালিদা বেগম বলেন, ভাসানচরের সবকিছুই আমাদের ভালো লেগেছে। সেখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর। সেখানে আমরা দুইদিন ছিলাম।

“সেখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও আমাদের দেখা হয়েছে। বেশিরভাগ রোহিঙ্গা নারী স্বজনদের জন্য কান্নাকাটি করছিল। সরকারের কাছে আমার দাবি, সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের স্বজনদেরও যেন সেখানে পাঠানো হয়। ” যোগ করেন তিনি।

ভাসানচর ঘুরে আসা রোহিঙ্গা অন্য নেতারা বলছেন, তারা ক্যাম্পে ফিরে সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছে ভাসানচরের সার্বিক অবস্থা বর্ণনা করছেন। কিন্তু সেখানে যাওয়া-না যাওয়া তাদের বিষয়।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ থেকে দুই নারীসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুইদিন অবস্থানকালে খাদ্য গুদাম, থাকার ঘর, আশ্রয় সেন্টার, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, খেলার মাঠ ও কবরস্থান, মাছ চাষের পুকুরসহ রোহিঙ্গাদের দ্বীপটির অবকাঠামো এবং সুযোগ সুবিধা দেখানো হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে নৌবাহিনী ও পুলিশের প্রতিনিধি, আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শনকালে সেখানে বিভিন্ন প্রকারের সবজির বাগান এবং সাগরের তীরে কেওড়া বাগান দেখে তারা মুগ্ধ হন এবং ফেরার আগের দিন সন্ধ্যায় তাদের ব্রিফিং করা হয়। যাতে ভাসানচরে যা যা দেখছেন তা যেন সঠিকভাবে ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের জানাতে পারেন।

তবে ফেরার পর তাদের অনেকের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হলে তারা এড়িয়ে যান, আবার অনেকে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন।

এদিকে রোহিঙ্গাদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) উখিয়া শাখার সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিকদার বাংলানিউজকে জানান, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে জামাই আদরে আছে। এ অবস্থায় এখান থেকে তারা কোথাও যেতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক।

আমরা যতটুকু জেনেছি, বিদেশি সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না যেতে উৎসাহিত করছে।

উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু এক লাখ নয়, সব রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া দরকার। না হলে উখিয়া-টেকনাফে স্থানীয়দের বসবাস করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়বে।

“এভাবে রোহিঙ্গাদের মতামত নিতে গেলে কোনো কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কারণ এখানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিরোধিতা রয়েছে”, যোগ করেন রফিক।

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। বাড়তি টাকা বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা, অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে খরচ হবে বলে জানা গেছে।

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com